সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ, ১৪৩১
কুয়াকাটা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর মহিপুরে গ্রাম্য ডাক্তার বাড়ি গভীর রাতে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাড়ির মালিক সুকদেব সৈদ্দাল। ডাকাতরা ঘরের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে ঘরের সবাইকে মারধর করে বেধে রেখে নগদ তিন লক্ষ টাকা ও পাঁচ লক্ষ স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে। এদিকে পুলিশ বলছেন ডাকাতির নাটক সাজানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দিবাগত রাতে লতাচাপলী ইউনিয়নের পৌরগোজা গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে গেছে, গ্রাম্য ডাক্তার সুকদেব সৈদ্দালের বসত বাড়িতে গ্রামের শতাধিক লোক জড়ো হয়েছেন। ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সুকদেব সৈদ্দাল। তার বসত ঘরের পূর্ব ও উত্তর পাশে দুইটি সিধ কাটা রয়েছে। ঘরের প্রধান দরজার লক ভাঙ্গা আছে। ঘরের মধ্যে অবস্থিত মিনি মন্দির ও আলমিরাসহ আসবাবপত্র এলোমেলো রয়েছে। মন্দিরে থাকা পিতলের রাঁধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি নেই।
সুকদেব সৈদ্দাল (৫০) বলেন, রাতের খাবার খেয়ে আমি ঘরের ভিতরের একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পরি। আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে সামনের বারান্দায় ঘুমায়। আর বড় ছেলে আমার ভাইয়ের বাসায় ঘুমিয়ে ছিলো। রাত দুইটার পরে হঠাৎ একটি শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এর মধ্যেই আমার স্ত্রী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করে। তখন ডাকাতরা তার চিৎকার থামানোর চেষ্টা করে। আমি রুমের ভিতর থেকে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিলে ওরা আমার রুমের দরজার সামনে এসে দরজা খুলতে বলে ওরা রুমের দরজায় লাথি মারতে থাকে একপর্যায়ে দরজা খুলে যায়। এরপর আমাকে লোহার রড দিয়ে তিনটা পিটার দিয়ে টাকা ও স্বর্ণালংকার চায়। অন্যথায় আমার ছোট ছেলেটাকে জবাই করার ভয় দেখায়। আমি ওদের চাবি দিতে বাধ্য হই। চাবি নিয়ে ওরা আমার হাত-পা, চোখ-মুখ বেধে ফেলে। এরপর ওরা নগদ তিন লক্ষ টাকা, পাঁচ লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার এবং সোনার মূর্তি ভেবে রাঁধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি নিয়ে চলে যায়। যাবার সময় ওরা পাশের ঘরে ডাকাতি করবে বলে চিৎকার নিতে নিষেধ করে।
তিনি আরও বলেন, ডাকাতদের সাথে একটি কাটা রাইফেল, অসংখ্য দেশীয় অস্ত্র ছিলো। ওরা সংখ্যায় ১৪-১৫ জন হবে। ঘরের মধ্যে ৮-৯জন, বাকিরা বাহিরে ছিলো। আমি কাউকে চিনতে পারি নি। দু’জন স্থানীয় ভাষায় কথা বললেও মুখে মাক্স ছিলো। বাকিরা চট্টগ্রাম এলাকার ভাষার মতো কথা বলছে। ওদের কারো পায়ে জুতা ছিলো না। ওরা নিজেদের মধ্যে গালাগালি ও হাসাহাসি করছে।
তিনি বলেন, ডাকাতরা প্রথমে ঘরের পূর্ব পাশ দিয়ে সিধ কেটে ডোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেখানে মন্দির থাকায় ডুকতে পারেনি। এরপর উত্তর পাশ দিয়ে সিধ কেটে ঘরে প্রবেশ করে। পিছনের বারান্দায় দরজা থাকায় ভিতরে ডুকতে পারেনি। সর্বশেষ সামনের দরজায় ধাক্কা দিয়ে লক ভেঙ্গে ঘরে ডুকে বাতি জ্বালিয়ে ওদের কাজ শুরু করে।
পুলিশ তার ঘর থেকে তিন লক্ষ দুই হাজার টাকা উদ্ধার করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ঘরে আলাদা আলাদা জায়গায় টাকা থাকে। ডাকাতরা তিন লক্ষ পেয়ে নিয়ে গেছে। বাকি টাকা খুঁজে পায়নি। যা পুলিশ খুঁছে পেয়েছে।
সুকদেব সৈদ্দালের স্ত্রী শিবানী রানী (৩৫) বলেন, আমি দরজা ভাঙ্গার শব্দ পেয়ে চোখ খুলে দেখি ৭-৮ জন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। আমি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিলে ওরা আমার ও ছোট ছেলে শিথিলের গলায় দা ধরে চিৎকার করতে নিষেধ করেন। এরপর আমরা চুপচাপ বসে থাকি।
সুকদেব সৈদ্দালের বড় ছেলে সৌরভ (১৭) বলেন, আমি পাশের চাচার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। বাবার ডাক চিৎকার শুনে বাহিরে বের হয়ে দেখি অপরিচিত ৪-৫ জন লোক অস্ত্র হাতে দাড়িয়ে আছে। আমি পিছনে ফেরৎ আসার জন্য দৌড় দিলে আচার খেয়ে মাটিতে পরে যাই। ওরা এসে আমাকে ধরে নিয়ে চোখ বেধে ফেলে।
প্রতিবেশী সুজন হাওলাদার বলেন, আমার ছেলে হৃদয় ও সৌরভ এক জায়গায় ঘুমিয়ে ছিলো। ডাকাতরা যাওয়ার পর হৃদয় আমাকে ডাকে। আমি ও আমার স্ত্রী এসে দেখি তাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ অবস্থায় কন্নাকাটি করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দুলাল সিকদার বলেন, ‘আমি সকালে খবর পেয়ে গিয়ে দেখি অনেক লোকজন উপস্থিত। সুকদেব ডাক্তারের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। ডাকাতির আলামত দেখেছি। সত্য মিথ্যা বলতে পারবো না।
এ প্রসঙ্গে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, রাতে খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক টহলে থাকা পুলিশ পাঠাই। পরে আমি সঙ্গিয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করি। তাদের একজনের বক্তব্যের সাথে অন্যজনের বক্তব্যের মিল না পেয়ে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে দুইটি মোবাইল এবং আলাদা আলাদা জায়গা থেকে তিন লক্ষ দুই হাজার পেয়েছি। আমার কাছে সাজানো নাটক মনে হয়েছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনি একজন পল্লী চিকিৎসক। তার কাছে অনেকগুলো ঔষধ কোম্পানী টাকা পাবে এবং আশেপাশের লোকজন তার ঘরে টাকা গচ্ছিত রাখে। তার ঘরে পাওয়া টাকা তাকে ফেরৎ দিয়েছে। মোবাইল দু’টি আমি নিয়ে এসেছি, তদন্ত করে বিস্তারিত জানাবো।